বাস্তববাদী তারাশঙ্কর জীবনের প্রত্যক্ষরূপের মধ্যে ডুব দিয়েই তৃপ্তি পেয়েছেন। দেহ-মন"ধাত্রীদেবতা' থেকে আরম্ভ করে "নাগিনীকন্যার কাহিনি” পর্যন্ত বিস্তৃত
আঞ্চলিক ঔপন্যাসিক এবং রাঢ় বাংলার বিখ্যাত লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
বাস্তববাদী তারাশঙ্কর জীবনের প্রত্যক্ষরূপের মধ্যে ডুব দিয়েই তৃপ্তি পেয়েছেন। দেহ-মন"ধাত্রীদেবতা' থেকে আরম্ভ করে "নাগিনীকন্যার কাহিনি” পর্যন্ত বিস্তৃত কালখণ্ডে তারাশঙ্কর সৃষ্টি প্রাণধারী মনুষ্যের ট্র্যাজেডিতেই তিনি কাতর। কোনো অনির্দেশ্য বেদনায় তিনি ভারাক্রান্ত নন। ক্ষমতার চরমে পৌঁছেছিলেন। কোনো কোনো উপন্যাসে একটা বৃহৎ মানবগোষ্ঠীর সামগ্রিক চিত্র প্রাণবস্ত হয়ে উঠেছে। কাহার-বাউরিদের সমাজ, সাপুড়ের পল্লি, ঝুমুরের দল তাদের সব বৈশিষ্ট্য নিয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে। শুধু গোষ্ঠীগত নয়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য্য চরিত্র সৃষ্টিতেও তারাশঙ্কর আশ্চর্য নিপুণতা দেখিয়েছেন।
আঞ্চলিক ঔপন্যাসিক এবং রাঢ় বাংলার বিখ্যাত লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে তারাশঙ্কর জন্মগ্রহণ করেন এবং মৃত্যু সন ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দ।তারাশঙ্কর একদা ল্লোলগোষ্ঠীর লেখক হিসাবে ঠাঁই পেলেও পরে 'কল্লোল' গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে বিশাল প্রান্তরে ছড়িয়ে পড়েন।কথাশিল্পী তারাশঙ্করের উপন্যাস ও ছোটো গল্পে জীবনের প্রবৃত্তিতাড়িত রূপ প্রকাশিত। গ্রাম্য শ্রমজীবী মানুষের কথায়, একটা সম্প্রদায়ের বা একটা অঞ্চলের পূর্ণাঙ্গ চিত্রাঙ্কনে তারাশঙ্করের উপন্যাস মহাকাব্যিক বিশালতা লাভ করেছে।
তারাশঙ্করকে টমাস হার্ডির সঙ্গে তুলনা করা হয় ।তারাশঙ্করের অনেকগুলি ছোটো গল্পে প্রবৃত্তিতাড়িত মানুষের যে অমার্জিত জান্তব রূপের পরিচা মেলে তা যেন এই আঞ্চলিকতারই (রাঢ়) প্রতিনিধি। রাঢ়-ভূমির যে মাটি থেকে তারা উঠে এসেছে, সেখানকার রৌদ্রদগ্ধ পিপাসা, জলহীন পাণ্ডুর মাটিতে দ্বাদশ সূর্যের দাহ সেখানকার চরিত্রগুলির স্বভাবেও যেন একপ্রকার লেলিহান রসনা, স্নেহপ্রেম, লোভলালসার একপ্রকার অগ্নিতপ্ততা সঞ্চার করেছে।
গণদেবতা' উপন্যাসের জন্য' তিনি জ্ঞানপীঠ পুরস্কার লাভ করেন । তারাশঙ্করের কয়েকটি আঞ্চলিক উপন্যাস হল- 'রাইকমল' (১৯৩৫), নীলকণ্ঠ' (১৯৪৩), 'ধাত্রীদেবতা' (১৯৩৯), 'কালিন্দী' (১৯৪০), 'গণদেবতা' (১৯৪২), 'পঞ্চগ্রাম' (১৯৪৩), 'হাঁসুলি বাঁকের উপকথা (১৯৪৭) প্রভৃতি। তার ছোটো গল্পে প্রাচীন ও নবীনের দ্বন্দ্ব দেখিয়েছেন - ‘রায়বাড়ি', 'জলসাঘর', 'পিতাপুত্র' প্রভৃতি এর মাধামে।এবং তারাশঙ্করের যেসব গল্পে আদিম প্রবৃত্তির লীলা রয়েছে 'তারিণী মাঝি', 'বেদেনী', 'নারী ও নাগিনী' প্রভৃতি।
তারাশঙ্কর কি জৈবিক বৃত্তির ভাষ্যকার-
তারাশঙ্কর কোনো জৈবিক বৃত্তির ভাষ্যকার নন, আদিম প্রবৃত্তির লীলাপ্রদর্শক মাত্র নন, তিনি মানবশিল্পী। কোমলেকঠোরে বিচিত্র রূপ তিনি পরিবেশন করেছেন। আদিমতার মরুভূমির মধ্যে কোমলতার মরূদ্যানও তাঁর চোখে পড়েছে। এই প্রসঙ্গে 'মতিলাল' ও 'ডাইনি' গল্প দুটি উল্লেখযোগ্য আবার প্রবৃত্তির ভয়ংকর দিকটা দেখানো হয়েছে 'বেদেনী' গল্পে।
COMMENTS